নিউ ওয়েভ : সীমাবদ্ধ চেষ্টা অসীমের সন্ধানে / সৈকত দে

নিউ ওয়েভ চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের মুখপত্র

সম্পাদক : শৈবাল চৌধূরী প্রচ্ছদ : মনিরুল মনির

চতুর্থ সংখ্যা মাঘ ১৪২১ ফেব্রুয়ারি২০১৫
প্রাপ্তিস্থান : লিটল ম্যাগ চত্বরের ‘নির্মাণ’ স্টল

নিউ ওয়েভ

নিউ ওয়েভ। দরকারি একটা কাগজ। চলচ্চিত্রের আজীবন প্রেমিকরা পাঠের অনেক বিষয় খুঁজে পাবেন এই পত্রিকায়। সম্প্রতি, বেশ চমৎকার একটি ঘরোয়া আয়োজনে ‘নিউ ওয়েভ’ পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যার প্রকাশনা উৎসব হয়। একটি লেখক কপির সাথে দুটো সম্মানী কপি এবং পান্ডুলিপিটি অতিথি এবং সম্পাদক কর্তৃক যুগ্মভাবে তুলে দেয়া, পুরো ব্যাপারটি আলোকচিত্রে ধারণ করা অভিনব একটি প্রয়াস। এই সংখ্যায় নতুন যেসব চলচ্চিত্র সাহিত্যিকদের লেখা মুদ্রিত হয়েছে তাঁদের কাছে অনুষ্ঠানটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সন্দেহ নেই। এই গদ্যটিতে সেদিনের অনুষ্ঠান বিষয়ে বিশদ আলোচনার সুযোগ নেই। আমি বরং মাননীয় সম্পাদক, শৈবাল চৌধূরীর একটি কথা সূত্র ধরে একশো বত্রিশ পৃষ্ঠার পত্রিকা পাঠে মনোনিবেশ করবো। তিনি, সম্পাদক, তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যে বলেন, কাউকে তিনি বানান শুদ্ধির জন্য বিরক্ত করেননি। পুরো পত্রিকার বানানগুলোর বিষয়ে তিনি অনেক সময় দিয়েছেন। তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, এতে একশো তেতাল্লিশটি মুদ্রণ প্রমাদ আমার চোখে পড়েছে, বানান ভুল, বাক্য বিভ্রাট, তথ্য বিভ্রাট সব মিলিয়ে। এবার আসুন, আমরা পত্রিকাটি পাঠ করতে শুরু করি। মনিরুল মনিরকৃত প্রচ্ছদ অনবদ্য। শুরুতেই সুলিখিত সম্পাদকীয়তে সম্পাদক বর্তমান বাংলাদেশের সিনেমা দেখা আর সিনেমা নিয়ে লেখালিখির প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘কয়েকটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এবং কয়েকজন নির্মাতার মধ্যে এদেশের চলচ্চিত্র জিম্মি কিংবা সিন্ডিকেটেড হয়ে রয়েছে।’ – এই বাক্যটি যথার্থ সত্য তুলে ধরে। চলচ্চিত্র সাহিত্য সম্পর্কে সম্পাদকীয় মতামত খুব সাহসী। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘ইদানিং অবশ্য চলচ্চিত্র বিষয়ক কিছু বইপুস্তক প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু এগুলো পড়লেই বোঝা যায়, বইগুলো ইন্টারনেট টেক্সটের অক্ষম অনুবাদ। এসব বইতে যেসব স্টিল- ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ছাপানো হয় সেগুলোর অনুপাত পর্যন্ত ঠিক করা হয় না! পুরো ব্যাপারটিই চরম হাস্যকর ও হতাশাজনক।’

নিউ ওয়েভ

ঋত্বিক ঘটকের নব্বইতম জন্মজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি ক্রোড়পত্র ছাপা হয়েছে। সম্প্রীতি দেবী, বিজন ভট্টাচার্যের মতন লেখক থাকতে গিয়াস আহমেদের একটা অতি সাদামাটা ফিল্ম রিভিউ দিয়ে ক্রোড়পত্রটি শুরু করা বড়ো চোখে লাগে। তার উপর তাঁর গদ্যে ব্যবহার করা শব্দ ‘ঋত্বিকতন্ত্র’ শব্দটি একান্তই সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের। ঋত্বিকের মহাপ্রয়াণের পর তাঁর উপর লেখা প্রথম প্রবন্ধে এই শব্দ ব্যবহার করেন শ্রী সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। সম্প্রীতি দেবীর লেখাটি খুব সুখপাঠ্য, বলা যায় ক্রোড়পত্রের ভারসাম্য রাখা একমাত্র লেখা। এই লেখায় মানুষ ঋত্বিককে পাওয়া যায় খুব জ্যান্তভাবে। বিজন ভট্টাচার্যের লেখাটি স্মৃতিতর্পণ হলেও বিশ্লেষণে, নন্দনতত্ত্বের মীমাংসা চেষ্টায় উজ্বল যা একরকম প্রত্যাশিত এই মাপের মানুষের কাছ থেকে। দুই ঋত্বিক গবেষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় আর সাজেদুল আউয়ালের দুটি লেখা যুক্ত হলে চমৎকার হতো ক্রোড়পত্রটি তবু যা আছে মন্দ নয়। আহমেদ রাসেলের দেবব্রত বিশ্বাস- ঋত্বিক ঘটক তুলনা প্রয়াস ভালো।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ এবং কমলকুমার জন্মশতবর্ষ স্মরণে ড. মাহবুবুল হক অদ্বৈত সম্পর্কে খুব দায়সারা একটা গদ্য লিখেছেন যাতে কেবল ধারাবাহিক জানা তথ্যসমারোহ যাতে নতুন কোন সত্যের উন্মোচন নেই। তবে কমলগবেষক হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নেয়া সত্যজিতের সাক্ষাতকারটি সুদুর্লভ এবং এখানে ছাপানো সুবিবেচনাপ্রসূত হয়েছে। সাথের ছবিটিও সুন্দর।

তৃতীয় অংশে আটটি লেখা মুদ্রিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে যেসব চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের প্রতি নিউ ওয়েভ এই লেখাগুলো দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে। সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় মণি কাউলকে নিয়ে লিখেছেন। সংক্ষিপ্ত সুন্দর। সৈকত দে গ্রীসের মহান চলচ্চিত্র পরিচালক থিও এঞ্জেলোপুলুসের জীবনে ইতিহাসের পটভূমি আর তাঁর প্রথম সিনেমা নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। এই লেখাটিতে এঞ্জেলপুলুসের প্রতি সম্ভাব্য নতুন দর্শকের আগ্রহী করে তোলার একটা আপ্রাণ চেষ্টা দেখা যায়। চেষ্টা হিসেবে সুন্দর তবে তাঁর কাছ থেকে আমরা আরো ভালো লেখা আশা করি। শৈবাল চৌধূরী ‘শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ লিখেছেন। লেখাটি ভালো তবে কন্ট্রোভার্শিয়াল একটি বক্তব্য নিয়ে দুটো একটা কথা আমি বলতে চাই। ‘…তবে পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে তিনি সফলতা দেখাতে পারেননি বলে আমার মনে হয়। ঋতুপর্ণের সম্পাদনাকালে চলচ্চিত্র পাক্ষিক আনন্দলোক- এর গুরুত্ব, জৌলুষ আর ঐতিহ্য হারায়। পত্রিকাটি পরিণত হয় এক গসিপ ম্যাগাজিনে’। এখানে দ্বিতীয় আর তৃতীয় বাক্য নিয়ে আমার খুব একটা বলার কিছু নেই। কেননা প্রথমত এই কথাটি বিচার করবার কিছু নেই কেননা আনন্দবাজার গোষ্ঠীর এই নরোম অর্ধপর্ণ পত্রিকার নিয়তিই হলো এটা গসিপ ম্যাগাজিন হবে। সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির পক্ষে তো বটেই সাধারণ, সুস্থ আর স্বাস্থ্যল মগজের পাঠকেরও আনন্দলোকের কাছে এছাড়া কিছু আশা করার নেই। দ্বিতীয়ত, ঋতুপর্ণের আনন্দলোক সম্পাদনাকালে বয়সজনিত কারণে ওটা চেখে দেখার সাধ্য আমার হয়নি। তৃতীয়ত, আমার সংগ্রহে থাকা ফুটপাথ থেকে কেনা আটানব্বই সালের দোসরা মে সত্যজিতের জন্মতিথি স্মরণ সংখ্যা আনন্দলোকে ঋতুপর্ণ লিখিত সম্পাদকীয় দেখতে পাচ্ছি – ‘‘মানিকবাবু’ নামটিও সত্যজিৎ রায়ের আকাশচুম্বী উচ্চতার আদরের অপভ্রংশ। পরিচিত বা অপরিচিত আপামর বাঙালির কাছে মানিকবাবু এমনই একটি মানুষ, যিনি খাদ্যরসিক, নানান ইনডোর খেলায় পারদর্শী, দারুণ আড্ডাবাজ এবং এক অপার কৌতুহলী কিশোরের ছ’ফুট মোড়কের অন্যনাম।’ লেখক তালিকায় দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, মৃণাল সেন, শর্মিলা ঠাকুর, গৌতম ঘোষ, বিলায়েৎ খান, অমিতাভ বচ্চন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সহ আরো কয়েকজনকে। আছে বিজয়া রায়ের সাথে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। আছে সত্যজিতের বিশেষ ও শেষ সাক্ষাৎকার শিরোনামে সাক্ষাৎকার। অগুনতি ছবি আর স্কেচে রীতিমত কালেক্টরস ইস্যু। আমার কিন্তু একটুও ‘গসিপ ম্যাগাজিন’ মনে হলো না। এখন প্রথম বাক্য নিয়ে কথা বলা যাক অর্থাৎ ‘…তবে পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে তিনি সফলতা দেখাতে পারেননি বলে আমার মনে হয়।’ লেখক তাঁর বিবেচনা লিপিবদ্ধের পূর্ণ অধিকার রাখেন। আমরা বাক্যের অন্তর্গত সত্য বিচার করে দেখি। আমরা জানি, পশ্চিমবঙ্গের একটা ভিন্ন ধারার দৈনিক ‘সংবাদ প্রতিদিন’। এই পত্রিকার রবিবাসরীয় সাপ্লিমেন্টের নাম ‘রোববার’। প্রয়াত হবার আগ অবধি বেশ কয়েক বছর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তাঁর অকালপ্রয়াণের পর সমূহ সম্পাদকীয় একত্রে, দুই খন্ডে বিন্যস্ত হয়ে ‘ফার্স্ট পার্সন’ নামে প্রকাশিত হয় দে’জ পাব্লিশিং থেকে। অনলাইনে পত্রিকাটির আর্কাইভ থেকে তখনকার পত্রিকা পাঠ সম্ভব। অথবা, দুই খন্ডের গ্রন্থ তো হাতের নাগালেই। বিষয় বৈচিত্র্য, নতুন বিষয় উদ্ভাবনে তিনি কতোদূর পারঙ্গম ছিলেন এই দুই উৎস থেকে সাধারণ পাঠক জেনে নিতে পারেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত ‘রোববার’ পত্রিকাতেও এই বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে নানাজনের স্মরণকথায়। আমরা অনেকেই জয় গোস্বামীর এখন অবধি প্রকাশিত তিন খন্ডের গ্রন্থ ‘গোঁসাইবাগান’- এর সাথে পরিচিত। এই খন্ডগুলোতে জয় তাঁর পাঠের অন্তর্গত কবিতা নিয়ে ভাবনার কথা লিখেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুর পর লেখা জয়ের গদ্যটি কেউ খুঁজে পেতে পড়লে ঋতুপর্ণের সম্পাদনা সফলতা সম্পর্কে বা শৈবালকথিত ব্যার্থতা সম্পর্কে কিছু ভাবনা খোরাক পাবেন। আমি কেবল বলতে চাই, শ্রদ্ধাঞ্জলির নামে এমন কন্ট্রোভার্শিয়াল বাক্য নির্মাণে বিরত থাকাই শ্রেয়। তাতে শ্রদ্ধার বদলে অশ্রদ্ধাই প্রকাশিত হয়। এছাড়া তথ্যে, উপাত্তে ঋতুপর্ণের সারা জীবনের শিল্পকাজের বিবরণ এতে উঠে এসেছে। নিউ ওয়েভ পত্রিকার এই সংখ্যায় আমার ব্যক্তিগত আবিষ্কার জহিরুল ইসলাম রনীল। স্প্যানিশ পরিচালক বিগাস লুনা বিষয়ে তাঁর লেখাটি ছোটো, সুন্দর, স্কেচধর্মী। পিটার ও’টুল নিয়ে লেখাটাও স্বাদু। আমি ওঁর লেখার দিকে লক্ষ্য রাখবো। তাঁর লেখার ভাষায় এক সারল্য আছে যা মোটেও তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত মনে হয় না। ‘চলচ্চিত্রের সুনীল’ লেখাটি লেখক সুনীল চলচ্চিত্রে কিভাবে অবদান রেখেছেন সেটা নিয়ে লেখা। বিদেশি অজস্র তথ্য থাকলেও মাত্রই কিছুদিন আগে নির্মিত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘মিশর রহস্য’ সিনেমার কথা বেমালুম ভুলে গেছেন গিয়াস আহমেদ। সম্পাদকের ব্যাপারটা খেয়াল করা দরকার ছিলো। ‘মনের মানুষ’ ছবির চিত্রনাট্য সহযোগী সম্ভবত শাহজাদ ফিরদাউস যা ভুলে ‘ফেরদৌস’ ছাপা হয়েছে। ‘চলচ্চিত্রের মার্কেজ’ লেখাটা নিছক তথ্য সমারোহ। তার উপর মার্কেজের চিত্রনাট্যের বইয়ের নামটি উদ্ধৃতির ভেতর না থাকায় আমপাঠকের বিভ্রাট ঘটায়। শৈবাল চৌধূরীর রিচার্ড এটেনবরো বিষয়ক লেখাটা দরকারি। কোনো তথ্যই বাদ পড়েনি। সকল স্তরের চলচ্চিত্র আগ্রহীদের জন্য এই লেখাটি খুব ইন্টারেস্টিং হবে। আমাদের উপলদা, সাজ্জাদ হোসেন উপল ছিলেন এমন একজন মানুষ যার শারিরীক উপস্থিতি, কর্মপদ্ধতি, চলচ্চিত্রপ্রেম প্রতি মোমেন্টে ভাবাবে অন্তত এই শহরের ফিল্মলাভারদের, সিনেমাকর্মীদের। তাঁর ‘তানভীর মোকাম্মেলের লাল সালু’ গদ্যটি উইটি, তীর্যক – এক কথায় অসামান্য! আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর চারিত্র্যের এই দিকটির সাথে অপরিচিত ছিলাম। এই গদ্য পাঠের পর বলতে ইচ্ছে করে, দেখুন না খুঁজে বের করা যায় কিনা তাঁর অন্য লেখাগুলো এবং তা দুই মলাটে আনা যায় কিনা!

নিউ ওয়েভ - সূচিপত্র

নিউ ওয়েভ – সূচিপত্র

চতুর্থ অংশে নয়টি চলচ্চিত্র সম্পর্কে আলোচনা আছে। এই অংশে হিল্লোল দত্তের ‘লেমন ট্রি’ এবং ‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্র দুটো নিয়ে যে আলোচনা মুদ্রিত হয়েছে তা নিয়ে কথা বলতে চাইনা বরং আরো বার দুয়েক পড়তে চাই। কিছু লেখা থাকে যা পড়লে যাপনের সাধ বাড়ে। এই লেখা দুটো তার সমগোত্রীয়। ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ নিয়ে এম. ইকবাল হাসান মন্দ লেখেননি। খেটেছেন বেশ। সঞ্জয় বিশ্বাসের ‘অপরাজিতা তুমি সম্পর্কের গল্প’ গদ্যটি সুন্দর কিন্তু একটা তথ্যবিভ্রাট আছে। চলচ্চিত্রটির গীতিকার অনিন্দ্য চট্ট্যোপাধ্যায় আর চন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নন বরং চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। সালাউদ্দিন সোহেল ‘টেলিভিশন’ নিয়ে গুছিয়ে একটা গদ্য লেখার  চেষ্টা করেছেন। তবে একটি ভুল বাক্য আছে – ‘এ চলচ্চিত্রের কোথাও দেখানো হয়নি তাঁর উদ্দেশ্য খারাপের জন্য।’ সোহেল আহমেদ ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ সিনেমাটা নিয়ে বিশদে লিখেছেন। তবে বারবার পরিচালকের নামের বানান ভুল বড় চোখে লাগে। তার চেয়ে বড় কথা মর্ডানিজমের বাংলা কি মর্দানিজম? এটাতো নিছক বানান ভুল নয়। মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ‘আমুর’ সিনেমা নিয়ে ভালো লেখা লিখেছেন। শুরুতেই ভুলভাবে মুদ্রিত বাক্য অস্বস্তি তৈরি করে। রশীদ সূর্য ‘আ সেপারেশন’ সিনেমা নিয়ে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু পরিশ্রমী লেখা লিখেছেন। শৈবাল চৌধূরীর ‘অপর্ণা সেনের গয়নার বাক্স’ রচনাটির একটা বাক্য বিভ্রম তৈরি করে। বাক্যটি এমন – ‘অস্কারে চূড়ান্ত মনোনয়নে বিজয়ী হয় থার্টি সিক্স চৌরঙ্গী লেন’। এই বাক্যের অর্থ কি এই দাঁড়ায় যে ছবিটা অস্কার জিতেছে? এই বাক্যের কি অন্য অর্থ উদ্ধার সম্ভব? মন্তব্য অদরকারী। ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী’ শিরোনামে একটা গ্রন্থনা করেছেন আলমগীর চৌধুরী রানা। অনেক মুদ্রণপ্রমাদে লেখাটি ভর্তি। সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক সম্মাননার তালিকায় সবার নাম নেই। আরেক জায়গায় আছে চট্টগ্রাম থেকে দুজন সুবর্ণজয়ন্তী পদক পেয়েছেন কিন্তু আগের পৃষ্ঠায় তাঁদের সম্মাননা স্মারক পাওয়ার তথ্য আমরা জানতে পারি। এবার আসুন একটা অংশ পড়ি- ‘এ দুইজন সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক সম্মাননা পদক অর্জন করায় এবং চলচ্চিত্র আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের উপদেষ্টা প্রবীণ চলচ্চিত্রকর্মী স্থপতি বিধান বড়ুয়াকে প্রত্যয়’৭১ এর পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের এই তিন কৃতি ব্যক্তিকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।’ গোলমেলে বাক্য নয় কি!

শেষ অংশে নিউ ওয়েভের তৃতীয় সংখ্যা প্রসঙ্গে মনিরুল মনির আর আহমেদ মুনির আলোচনা করেছেন। দুটি লেখাই ভালো। লেখাগুলো শেষে আমরা দেখি গোদার মুখে সিগারেট নিয়ে ফিল্মের কাঁচামাল পরীক্ষা করছেন। এটা প্রতীকী। যতোদিন চলচ্চিত্র প্রেমিকরা বেঁচে থাকবেন তাঁরা অবিশ্রাম ছবি দেখবেন, আলোচনা করবেন। লিখবেন। নানা সীমাবদ্ধতার পরেও এই সংখ্যার প্রকাশ একটা ঘটনা। আগামীতে সম্পাদক সকল কাজে তাঁর কর্মীবাহিনীকে যুক্ত করবেন, তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত প্রজ্ঞায় কর্মীদের আর হবু লেখকদের পরিচর্যা করবেন এটাই একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে, চলচ্চিত্রের আযাপন প্রেমিক হিসেবে আশা করি।

এই দীর্ঘ লেখাটি পড়ার বা চোখ বোলানোর জন্য অভিবাদন।

...

সৈকত দেসৈকত দে

কবি, গদ্যকার

1 Comment

Filed under সারথি

One response to “নিউ ওয়েভ : সীমাবদ্ধ চেষ্টা অসীমের সন্ধানে / সৈকত দে

  1. Pingback: সৈকত দে-র গদ্য ।। গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে : ঋতুপর্ণ ঘোষ

Leave a comment